.header{text-align:center;}

Tuesday 22 November 2016

মার্কিন নির্বাচন: মূলধারার গণমাধ্যমকে হারিয়ে দিলো বিকল্প গণমাধ্যম

আমেরিকান মিডিয়া, যেমন সিএনএন, একে এন্টি মিডিয়াও বলছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা গত চার বছর ধরে লন্ডনে ইকুয়েডরিয়ান অ্যামবেসির দুটো রুমে অন্তরীণ আছেন। সুইডেন এবং আমেরিকা দুটো দেশই তাকে এক্সট্রেডাইট মানে অন্য আরেকটি দেশে বিচার করতে তৎপর। অ্যাসাঞ্জ নিজেও সম্প্রতি জন পিলগার কে দেয়া ইন্টারভিউতে বলেছেন উনি এমব্যাসি থেকে বের হলেই গ্রেফতার হবেন। সুইডেনও একসময় তাকে ঠিকই আমেরিকার কাছে সোপর্দ করবে।

This is an undated handout photo issued by Sunshine Press made available Tuesday May 10, 2016 of WikiLeaks founder Julian Assange with a kitten in Ecuador's embassy in London . It may not be so lonely for WikiLeaks founder Julian Assange in the embassy quarters he's called home for nearly four years. Now he has a kitten to keep him company.The kitten had not been named yet. (Sunshine Press/Wikileaks via AP)
এই ইন্টারভিউতে হিলারি ক্লিনটন নিয়ে অনেক কথাই উঠে এসেছে যেটা পরবর্তীতে বলা যায় অনেক দারুন ভাবেই ইলেকশনকে প্রভাবিত করেছে। সে জন্যই আজকে একথা খুবই উচ্চারিত- মিডিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে এন্টি মিডিয়া। ওয়েস্টার্ন মিডিয়া বিশেষ করে সিএনএন, বিবিসি তো বলা যায় ইলেকশনের পর রাষ্ট্রীয় শোকে ব্যস্ত। অ্যাসাঞ্জের  ইন্টারভিউতে এসেছে হিলারির ক্যাম্পেইন টিম কিভাবে তার নিউজ গুলো ফিল্টার করে দিতেন তারপর সে গুলো সিএনএন দেখাত। সেজন্যই বোধকরি ট্রাম্প নির্বাচন পরবর্তী শোতে বলেছেন সিএনএন ইস ডেড।
এফবিআইকে অ্যাসাঞ্জ বলেছেন পলিটিকাল পুলিশ। যারা যে কাউকেই ঘাড় ধরে নামিয়ে আনতে পারে। সাবেক সিআইএর প্রধান যিনি হিলারিকে অনেক ক্লাসিফাইড ইনফর্মেশন দিয়েছিলেন। এখানে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অর্থ জোগান থেকে শুরু করে, হত্যা, হুমকি সবই ছিল। যেগুলো ইমেইলে উঠে এসেছিল। যার জন্য পরবর্তীতে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। হিলারি এতটাই ক্ষমতাবান ছিলেন যে এফবিআই এর তদন্তও ঠেকাতে পেরেছিলেন। সে জন্য এফবিআইও ইলেকশনের আগে একটা ঘা দিতে চেয়েছিল। পরিপূর্ণভাবে পারেনি হয়ত।
Democratic presidential candidate Hillary Clinton speaks at her first-in-the-nation presidential primary campaign rally, Tuesday, Feb. 9, 2016, in Hooksett, N.H. (AP Photo/Matt Rourke)
হিলারি তার ইমেইল ফাঁসের পেছনে রাশিয়ার হাত আছে বলে জোর গলায় বলেছিলেন। যেটাকে আবার অ্যাসাঞ্জ তুলনা করেছেন নিউ ম্যাকার্থি হিস্টিরিয়ার সাথে। মানে যাই কিছু সমস্যার, তার পেছনে রাশিয়ার হাত। উইকিলিকস দশ বছর ধরে এ কাজ করে আসছে এবং তাদের হাজারো সোর্স আছে। তারা এটা নিশ্চিত করেছে এতে রাশিয়ার হাত ছিল না। এর মধ্যে একটা ইমেইল এ একজন কাতারের প্রতিনিধির সাথে পাঁচ মিনিটের সাক্ষাতের জন্য ক্লিনটন এক মিলিয়ন ডলার এবং একই কারণে মরোক্কোর একজন প্রতিনিধির কাছ থেকে বারো মিলিয়ন ডলার নিয়েছিলেন। এরাই (কাতারি, সৌদি, মরোক্কান) আবার অর্থায়ন করেছে আইসিসকে। এজন্যই হিলারি আইসিস ঠেকানোর প্রশ্নে সবসময় গোজামিল দিয়ে আসছিলেন। যেটা ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে পেরেছিলেন। মনে হয় মানুষ খেয়েছেও।
২০১৪ র শুরুতে হিলারি সেক্রেটারি অফ স্টেট থেকে সরে যাবার পরে ওনার ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জন পেডেসটা কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবার পর ওনাকে লিখা একটা ইমেইলে সরাসরি উল্লেখ করেছেন কি করে কাতারী বা সৌদি গভমেন্টের টাকা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে যাচ্ছে এবং সেই সাথে আইসিসও পাচ্ছে। ওনার সময়েই সৌদি গভমেন্টের সাথে সবচেয়ে বড় অস্ত্র চুক্তি করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। আশি বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনে সৌদি সরকার। বোঝাই যায় এই অস্ত্র কারা ব্যবহার করেছে।
অ্যাসাঞ্জ ২০১২-র লিবিয়ার যুদ্ধকে হিলারির যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। গাদ্দাফি লিবিয়াকে একটা বোতলের কর্কের সাথে তুলনা করেছিলেন। যদি ছিপিটি খুলে যায় তাহলে গলগল করে সব বেরিয়ে পড়বে। লিবিয়া আক্রমণ ওবামা প্রথমে সমর্থন করেননি। অনেকেই ভেবেছিলেন লিবিয়ার সস্তা তেলের আশায় আমেরিকা এ যুদ্ধে জড়াচ্ছে। পরে দেখা গেল হিলারি গাদ্দাফিকে সরানোকে তার কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রমান করে ২০১২ তেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।
পরে আমরা দেখেছি কিভাবে লিবিয়াতে জিহাদি গ্রুপগুলো তৈরী হয়েছে, আইসিস ঢুকেছে এবং সিরিয়াতে অনুপ্রবেশ করেছে। আজকের এই ব্যাপক শরণার্থী সমস্যার সূচনাও এখান থেকেই। যেটা গাদ্দাফি আগেই বলেছিলেন। আজকের এই আইসিসের সূচনাও তখন থেকেই। এজন্যই ট্রাম্প তার নির্বাচনী বক্তৃতায় বার বার হিলারিকে আইসিসের ফাউন্ডার হিসেবে বললেও আমাদের বুঝতে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু উইকিলিকসের ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্যে এগুলো এখন সবার জানা।
facebook-banner
হিলারিকে অ্যাসাঞ্জ তুলনা করেছেন কগ অফ এ হুইল (Cog of a wheel) বা কোন কিছুর কেন্দ্রের সাথে। যাকে কেন্দ্র করে অশুভ চক্রটি অনবরত ঘুরেছে। পেডেসটার কাছে করা ইমেইলে এসেছে কিভাবে ওবামা কেবিনেটের প্রায় অর্ধেকই এসেছে সিটি ব্যাংক থেকে। সাক্ষাৎকারে হিলারিকে একজন অসুস্থ মানুষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যিনি তার অতিরিক্ত ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার উচ্চাভিলাষী মনমানসিকতার কারণে নিজেই নিজেকে আত্তীকরণ (ইটেন এলাইভ) করেছেন।
উইকিলিকসের বিরুদ্ধে অভিজোগ এসেছিল তারা ট্রাম্প কে ক্ষমতায় আনতে চায় এবং এটা করতে যেয়ে তারা রাশিয়ার উদ্দেশ্য কে হাসিল করতে দিচ্ছে। আসাঞ্জ বলেছেন পাল্লায় মাপলে সমস্ত ব্যাংক, মিডিয়া কর্পোরেট হাউস, আর্মস কোম্পানি, সবাই তো হিলারির দিকে আর শুধু মাত্র ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিষ্টানদের নিয়ে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসতে পারে কি। এই নির্বাচনে মানুষ বিশেষ করে বেকার শেতাঙ্গরা রায় দিয়েছে বিদ্যমান এস্টেবলিশমেন্টের বা স্টাটাস কো র বিরুদ্ধে।
ট্রাম্পের নির্বাচন পরবর্তী মঞ্চে উপস্থিত পরিবারের নারীদের দেখে কে শোকে মুহ্যমান বিবিসি কে বলতে দেখেছি, এরা কেউই হাই স্কুল গ্রাজুয়েট নন, সবাই রুরাল ব্যাকগ্রাউন্ডের। এখন সিএনএন এর আলোচনা আরো হাস্যকর। এরা চিন্তিত কিভাবে প্রো রাশিয়ান স্পিরিট আমেরিকান সোসাইটিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করবে। এটাই হচ্ছে গণমাধ্যমের চেহারা। এই নির্বাচন ছিল গণমাধ্যমের গালে একটা চপেটাঘাত।

No comments:

Post a Comment